বিভিন্ন ধরণের ফাংশন

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - উচ্চতর গণিত - উচ্চতর গণিত – ১ম পত্র | | NCTB BOOK

ফাংশনের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যা তাদের গঠন, প্রকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। নিচে কিছু সাধারণ ধরণের ফাংশনের তালিকা এবং তাদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:


১. রৈখিক ফাংশন (Linear Function)

রৈখিক ফাংশনগুলোতে একটি সরলরেখা বা সোজাসুজি সম্পর্ক থাকে। সাধারণত এই ধরনের ফাংশনের ফর্ম হয় \( f(x) = mx + b \), যেখানে \( m \) হল ঢাল এবং \( b \) হল y-অক্ষের ছেদ বিন্দু।

উদাহরণ: \( f(x) = 2x + 3 \)


২. গৌণ ফাংশন (Quadratic Function)

গৌণ ফাংশনের ডিগ্রি ২ হয় এবং এদের আকার হয় \( f(x) = ax^2 + bx + c \)। এটি একটি প্যারাবোলা আকারের গ্রাফ তৈরি করে।

উদাহরণ: \( f(x) = x^2 - 4x + 4 \)


৩. সূচকীয় ফাংশন (Exponential Function)

সূচকীয় ফাংশনগুলোতে \( x \) এক্সপোনেন্ট হিসেবে থাকে এবং এর সাধারণ ফর্ম হলো \( f(x) = a \cdot b^x \), যেখানে \( b \) হলো বেস এবং \( a \) হলো একটি ধ্রুবক।

উদাহরণ: \( f(x) = 2^x \)


৪. লগারিদমিক ফাংশন (Logarithmic Function)

লগারিদমিক ফাংশনগুলো হলো সূচকীয় ফাংশনের বিপরীতধর্মী ফাংশন। এদের সাধারণ ফর্ম হলো \( f(x) = \log_b(x) \), যেখানে \( b \) বেস বা ভিত্তি।

উদাহরণ: \( f(x) = \log_2(x) \)


৫. ত্রিকোণমিতিক ফাংশন (Trigonometric Function)

ত্রিকোণমিতিক ফাংশনগুলো কোণ এবং তাদের সম্পর্কিত অনুপাতের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সাধারণ ত্রিকোণমিতিক ফাংশন হলো sine (\( \sin \)), cosine (\( \cos \)), tangent (\( \tan \)) ইত্যাদি।

উদাহরণ: \( f(x) = \sin(x) \), \( f(x) = \cos(x) \)


৬. পরম ফাংশন (Absolute Function)

পরম ফাংশনগুলোর আউটপুট সর্বদা ধনাত্মক হয়। সাধারণত এদের ফর্ম হলো \( f(x) = |x| \), যেখানে \( |x| \) x-এর পরম মান বোঝায়।

উদাহরণ: \( f(x) = |x - 3| \)


৭. ধাপে ফাংশন (Step Function)

ধাপে ফাংশন এমন ফাংশন যা এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে চলে যায় এবং নির্দিষ্ট মানে রূপান্তরিত হয়। এদের সাধারণ উদাহরণ হলো Heaviside Function এবং **Greatest Integer Function (Floor Function)**।

উদাহরণ: \( f(x) = \lfloor x \rfloor \)


৮. যৌগিক ফাংশন (Composite Function)

যৌগিক ফাংশন হলো দুটি বা ততোধিক ফাংশনের সমন্বয়, যেখানে একটি ফাংশনের আউটপুট অন্য ফাংশনের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত \( f(g(x)) \) আকারে প্রকাশ করা হয়।

উদাহরণ: \( f(g(x)) \) যেখানে \( f(x) = x + 2 \) এবং \( g(x) = x^2 \), তাহলে \( f(g(x)) = x^2 + 2 \)


৯. পূর্ণাংক ফাংশন (Polynomial Function)

পূর্ণাংক ফাংশন হলো এমন ফাংশন যেখানে একটি পূর্ণ সংখ্যার ঘাত থাকে। এদের সাধারণ ফর্ম হলো \( f(x) = a_nx^n + a_{n-1}x^{n-1} + \ldots + a_0 \)।

উদাহরণ: \( f(x) = x^3 + 2x^2 + 5x + 7 \)


১০. যুক্তিসংগত ফাংশন (Rational Function)

যুক্তিসংগত ফাংশন হলো দুটি পূর্ণাংক ফাংশনের অনুপাত। এর সাধারণ ফর্ম হলো \( f(x) = \frac{p(x)}{q(x)} \), যেখানে \( p(x) \) এবং \( q(x) \) উভয়ই পূর্ণাংক ফাংশন।

উদাহরণ: \( f(x) = \frac{2x + 3}{x - 1} \)


এই ফাংশনগুলোর বিভিন্ন প্রকারভেদ তাদের গাণিতিক বৈশিষ্ট্য এবং আচরণের কারণে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

এক-এক ফাংশন

এক-এক ফাংশন (One-to-One Function) বা ইনজেক্টিভ ফাংশন হলো এমন একটি ফাংশন, যেখানে প্রতিটি ভিন্ন ইনপুটের জন্য একটি ভিন্ন আউটপুট থাকে। অর্থাৎ, যদি \( f(x_1) = f(x_2) \) হয়, তবে \( x_1 = x_2 \) হতে হবে। একে সাধারণত ইনজেক্টিভ ফাংশনও বলা হয়।


এক-এক ফাংশনের বৈশিষ্ট্য

১. প্রতিটি ইনপুটের জন্য আলাদা আউটপুট: এক-এক ফাংশনে, ডোমেনের প্রতিটি ভিন্ন ইনপুট মানের জন্য একটি ভিন্ন আউটপুট মান থাকে। অর্থাৎ, \( x_1 \neq x_2 \) হলে \( f(x_1) \neq f(x_2) \) হবে।

২. হরাইজন্টাল লাইন টেস্ট: ফাংশনটির গ্রাফে কোনো হরাইজন্টাল লাইন একবারের বেশি ছেদ না করলে সেটি এক-এক ফাংশন হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পরীক্ষাকে Horizontal Line Test বলা হয়।


উদাহরণ

ধরা যাক \( f(x) = 2x + 3 \) একটি ফাংশন। এখানে:

  • \( f(1) = 2 \times 1 + 3 = 5 \)
  • \( f(2) = 2 \times 2 + 3 = 7 \)

যেহেতু \( f(1) \neq f(2) \), এবং ডোমেনের প্রতিটি ভিন্ন মানের জন্য আলাদা আউটপুট পাওয়া যাচ্ছে, তাই এটি একটি এক-এক ফাংশন।


এক-এক ফাংশনের ব্যবহার

এক-এক ফাংশন বিভিন্ন গাণিতিক এবং প্রোগ্রামিং সমস্যায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ইনভার্স ফাংশনের জন্য, কারণ এক-এক ফাংশনের ক্ষেত্রে প্রতিটি আউটপুটের জন্য একটি নির্দিষ্ট ইনপুট থাকে, যা ইনভার্স ফাংশন নির্ধারণে সহায়ক।

সার্বিক ফাংশন

সার্বিক ফাংশন (Onto Function) বা সার্জেক্টিভ ফাংশন হলো এমন একটি ফাংশন, যেখানে রেঞ্জের প্রতিটি মানের জন্য ডোমেনের অন্তত একটি মান থাকে। অর্থাৎ, ফাংশনটির আউটপুট সেট (রেঞ্জ) পুরো কোডোমেন বা লক্ষ সেটটি পূর্ণ করে।


সার্বিক ফাংশনের বৈশিষ্ট্য

১. রেঞ্জ এবং কোডোমেন সমান: সার্বিক ফাংশনের রেঞ্জ এবং কোডোমেন এক এবং অভিন্ন। অর্থাৎ, ফাংশনের প্রতিটি আউটপুট মান কোডোমেনে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং কোডোমেনের কোনো মান বাদ পড়বে না।

২. ইনভার্স নির্ধারণ: একটি ফাংশন যদি একসঙ্গে এক-এক এবং সার্বিক হয়, তবে তা ইনভার্টেবল হয় এবং এর ইনভার্স ফাংশনও সার্বিক হবে।


উদাহরণ

ধরা যাক, \( f: \mathbb{R} \rightarrow \mathbb{R} \) একটি ফাংশন, যেখানে \( f(x) = x^3 \)। এখানে,

  • যেকোনো \( y \in \mathbb{R} \)-এর জন্য \( f(x) = y \) সমাধান আছে, যেমন \( x = \sqrt[3]{y} \)।
  • অর্থাৎ, প্রতিটি রিয়াল আউটপুট \( y \)-এর জন্য এমন একটি ইনপুট \( x \) আছে, যা \( f(x) = y \) কে সন্তুষ্ট করে।

সুতরাং, এই ফাংশনটি সার্বিক।


সার্বিক ফাংশনের ব্যবহার

সার্বিক ফাংশন গণিত, গাণিতিক বিশ্লেষণ, এবং গাণিতিক মডেলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি আউটপুট বা লক্ষ মানকে ইনপুট মানের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

সংযোজিত ফাংশন

সংযোজিত ফাংশন (Bijective Function) হলো এমন একটি ফাংশন, যা একসঙ্গে এক-এক ফাংশন (Injective) এবং সার্বিক ফাংশন (Onto) উভয়ই। অর্থাৎ, সংযোজিত ফাংশনের প্রতিটি ইনপুট মানের জন্য একটি স্বতন্ত্র আউটপুট থাকে এবং সেই আউটপুট কোডোমেনের প্রতিটি উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই ধরনের ফাংশনকে বাইজেক্টিভ ফাংশনও বলা হয়।


সংযোজিত ফাংশনের বৈশিষ্ট্য

১. এক-এক এবং সার্বিক উভয়ই: সংযোজিত ফাংশন এমন একটি ফাংশন, যা একদিকে যেমন এক-এক ফাংশনের শর্ত পূরণ করে, অর্থাৎ প্রতিটি ইনপুট মানের জন্য একটি স্বতন্ত্র আউটপুট থাকে, অন্যদিকে এটি সার্বিকও, অর্থাৎ কোডোমেনের প্রতিটি উপাদান একটি ইনপুটের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

২. ইনভার্স ফাংশনের অস্তিত্ব: যেহেতু সংযোজিত ফাংশনে প্রতিটি আউটপুটের জন্য একটি নির্দিষ্ট ইনপুট থাকে এবং ফাংশনটি কোডোমেনের সমস্ত মানকে অন্তর্ভুক্ত করে, তাই এই ধরনের ফাংশনের ইনভার্স ফাংশন থাকা সম্ভব। অর্থাৎ, সংযোজিত ফাংশন ইনভার্টেবল।


উদাহরণ

ধরা যাক, \( f: \mathbb{R} \rightarrow \mathbb{R} \) একটি ফাংশন, যেখানে \( f(x) = 2x + 3 \)।

  • এটি এক-এক, কারণ \( f(x_1) = f(x_2) \Rightarrow x_1 = x_2 \)।
  • এটি সার্বিকও, কারণ যেকোনো \( y \in \mathbb{R} \)-এর জন্য \( f(x) = y \) হলে \( x = \frac{y - 3}{2} \) পাওয়া যায়, অর্থাৎ প্রতিটি \( y \)-এর জন্য একটি \( x \) আছে।

এখন, যেহেতু এই ফাংশনটি একসঙ্গে এক-এক এবং সার্বিক, তাই এটি একটি সংযোজিত ফাংশন।


সংযোজিত ফাংশনের ব্যবহার

সংযোজিত ফাংশন গণিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ফাংশনের ইনভার্স খুঁজে বের করতে এবং সমীকরণের সমাধানে। সংযোজিত ফাংশন ব্যবহার করে ডেটাবেস মডেলিং, এনক্রিপশন এবং ডিকোডিং প্রক্রিয়ায় কার্যকর উপায়ে কাজ করা যায়।

অভেদ ফাংশন

অভেদ ফাংশন (Identity Function) হলো এমন একটি ফাংশন, যেখানে প্রতিটি ইনপুটের আউটপুট তার সমান থাকে। অর্থাৎ, অভেদ ফাংশন প্রতিটি মানকে অপরিবর্তিত রেখে তা ফেরত দেয়। এটি সাধারণত \( I(x) = x \) আকারে প্রকাশ করা হয়, যেখানে \( x \) ইনপুট এবং \( I(x) \) তার আউটপুট।


অভেদ ফাংশনের বৈশিষ্ট্য

১. অপরিবর্তিত আউটপুট: অভেদ ফাংশনে প্রতিটি ইনপুট \( x \)-এর জন্য আউটপুটও \( x \) হয়। অর্থাৎ, \( I(x) = x \)।

২. গ্রাফ: অভেদ ফাংশনের গ্রাফ \( y = x \) রেখা বরাবর একটি সোজাসুজি রেখা হয়, যা মূলবিন্দুর (origin) উপর দিয়ে চলে।

৩. ফাংশনের কম্পোজিশনে ভূমিকা: অভেদ ফাংশন ফাংশন কম্পোজিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ যে কোনো ফাংশন \( f \)-এর জন্য, \( f \circ I = f \) এবং \( I \circ f = f \)। অর্থাৎ, অভেদ ফাংশন একটি ফাংশনের মান পরিবর্তন না করে সেটিকে অপরিবর্তিত রাখে।


উদাহরণ

ধরা যাক \( I: \mathbb{R} \rightarrow \mathbb{R} \) একটি অভেদ ফাংশন, যেখানে \( I(x) = x \)। এখানে:

  • যদি \( x = 5 \) হয়, তবে \( I(5) = 5 \)।
  • যদি \( x = -3 \) হয়, তবে \( I(-3) = -3 \)।

এই ক্ষেত্রে প্রতিটি ইনপুট তার নিজস্ব মানকে আউটপুট হিসেবে ফেরত দেয়, তাই এটি একটি অভেদ ফাংশন।


অভেদ ফাংশনের ব্যবহার

অভেদ ফাংশন গাণিতিক বিশ্লেষণ এবং বিমূর্ত বীজগণিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে যখন একটি ফাংশনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রাখা প্রয়োজন। এটি ফাংশন কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর, কারণ অভেদ ফাংশনের সাথে কম্পোজিশনে কোনো ফাংশনের আউটপুট অপরিবর্তিত থাকে।

ধ্রুবক ফাংশন

ধ্রুবক ফাংশন (Constant Function) হলো এমন একটি ফাংশন, যেখানে প্রতিটি ইনপুটের জন্য আউটপুট একটি নির্দিষ্ট ধ্রুবক মান হয়। অর্থাৎ, ডোমেনের যেকোনো মানের জন্য আউটপুট সর্বদা একটি নির্দিষ্ট মানেই থাকে এবং পরিবর্তিত হয় না। ধ্রুবক ফাংশনের সাধারণ রূপ হলো \( f(x) = c \), যেখানে \( c \) একটি ধ্রুবক সংখ্যা।


ধ্রুবক ফাংশনের বৈশিষ্ট্য

১. নির্দিষ্ট আউটপুট: ধ্রুবক ফাংশনে যে মানই ইনপুট হিসেবে দেওয়া হোক না কেন, আউটপুট সবসময় একটি নির্দিষ্ট ধ্রুবক মান \( c \) হয়।

২. গ্রাফ: ধ্রুবক ফাংশনের গ্রাফ \( y = c \) রেখা বরাবর একটি অনুভূমিক (horizontal) রেখা হয়। এই রেখা \( y \)-অক্ষের উপর \( c \) পয়েন্ট দিয়ে অতিক্রম করে এবং এই রেখা কোনো ঢাল (slope) ধারণ করে না, অর্থাৎ ঢাল শূন্য।

৩. এক-এক বা সার্বিক নয়: ধ্রুবক ফাংশন এক-এক (one-to-one) বা সার্বিক (onto) নয়, কারণ এটি প্রতিটি ইনপুট মানের জন্য একই আউটপুট প্রদান করে এবং পুরো কোডোমেন কভার করে না।


উদাহরণ

ধরা যাক একটি ধ্রুবক ফাংশন \( f(x) = 7 \)।

  • যদি \( x = 1 \) হয়, তবে \( f(x) = 7 \)।
  • যদি \( x = -3 \) হয়, তবুও \( f(x) = 7 \)।
  • যদি \( x = 10 \) হয়, তখনও \( f(x) = 7 \)।

এখানে যেকোনো ইনপুটের জন্য আউটপুট সর্বদা ৭, যা এই ফাংশনকে একটি ধ্রুবক ফাংশন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।


ধ্রুবক ফাংশনের ব্যবহার

ধ্রুবক ফাংশন বিভিন্ন গাণিতিক ও বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট মান অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বস্তুর তাপমাত্রা যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপরিবর্তিত থাকে, তবে সেই তাপমাত্রাকে ধ্রুবক ফাংশন দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

Promotion